কীভাবে তৈরি হয় দুর্ভেদ্য বুলেটপ্রুফ কাচ? জেনে রাখা উচিত

কীভাবে তৈরি হয় এই বুলেটপ্রুফ গ্লাস? কীভাবে কাজ করে কাচের তৈরি এই বর্ম? বুলেটপ্রুফ গ্লাস কীভাবে গুলি বা বুলেটের বিরুদ্ধে দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে? বুলেটপ্রুফ কাচ কি সব ধরনের গুলি প্রতিরোধে সক্ষম?

Apr 7, 2024 - 00:51
Apr 19, 2024 - 18:49
 0
কীভাবে তৈরি হয় দুর্ভেদ্য বুলেটপ্রুফ কাচ? জেনে রাখা উচিত

নয়া জামানা ডিজিটাল ডেস্ক : বিশ্বের বিভিন্ন দামি গাড়ি কিংবা বাড়িতে বুলেটপ্রুফ গ্লাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গয়নার দোকান হোক বা মিউজিয়াম, দূতাবাস হোক বা সামরিক ঘাঁটি, ভিভিআইপি লোকজনের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং বাড়িতে নিরাপত্তার প্রয়োজনে বুলেটপ্রুফ গ্লাস ব্যবহার করা হয়। এই দুর্ভেদ্য বুলেটপ্রুফ গ্লাস ভেদ করে বন্দুকের গুলি ছুঁতেও পারে না নেতা-মন্ত্রী-পুঁজিপতিদের। কীভাবে তৈরি হয় এই বুলেটপ্রুফ গ্লাস? কীভাবে কাজ করে কাচের তৈরি এই বর্ম? বুলেটপ্রুফ গ্লাস কীভাবে গুলি বা বুলেটের বিরুদ্ধে দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে? বুলেটপ্রুফ কাচ কি সব ধরনের গুলি প্রতিরোধে সক্ষম? জেনে রাখা উচিত, বুলেটপ্রুফ কাচের বুলেট-প্রতিরোধী ক্ষমতার রহস্য।

সবাই জানেন, কাচ একটি স্বচ্ছ ও ভঙ্গুর পদার্থ। সাধারণ কাচ মূলত সিলিকন ডাই অক্সাইডের সঙ্গে সোডিয়াম অক্সাইড এবং ক্যালসিয়াম অক্সাইড মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এ ধরনের কাচের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, স্বচ্ছতা এবং ভঙ্গুরতা। তবে আর-এক ধরনের কাচ বা গ্লাসের কথা শোনা যায়, যাকে বুলেটপ্রুফ কাচ বলা হয়। যে কাচ সহজে ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে না। বুলেটপ্রুফ কাচ কোনও সাধারণ কাচ নয়। বরং এটি এমন একধরনের কাচ, যাদের বলা যায় ‘ল্যামিনেটেড কাচ’, যা সহজে ভাঙে না। কাচের ভেতরের স্তরে পলিভিনাইল বুটিরাল বা পিভিবি এবং ইথিলিন-ভিনাইল অ্যাসিটেট বা ইভিএ-র প্রলেপ দেওয়া থাকে। এজন্য এই কাচ সহজে ভাঙে না, ভেঙে গেলেও সহজে বিচ্ছিন্ন হয় না। 

বুলেটপ্রুফ কাচগুলো সাধারণত অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধক এবং শব্দনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বুলেটপ্রুফ কাচ সব ধরনের গোলাগুলি প্রতিরোধে সক্ষম, এটা নির্ভর করে বুলেটপ্রুফ গ্লাসের ঘনত্বের ওপর। কারণ, আগেই বলেছি, এগুলি তৈরি করা হয় ল্যামিনেটেড কাচের আস্তরণ দিয়ে, যত বেশি আস্তরণ পড়বে, সেই কাচ তত বেশি মজবুত হবে। বুলেটপ্রুফ কাচ তৈরির জন্য দুটি গ্লাসের মধ্যে একটি পলিকার্বনেট লেয়ার দেওয়া হয়। এই পলিকার্বনেট খুবই পাতলা কিন্তু অনেক শক্ত এবং স্বচ্ছ একধরনের প্লাস্টিক। এরপরে সেই লেয়ার সহ গ্লাসগুলোকে হিট দেওয়া হয়, যাকে ল্যামিনেশন বলা হয়। সেক্ষেত্রে পরতে পরতে সাজানো সম্পূর্ণ জিনিসটিকে একটি কাচের মতোই দেখায়।

এই বুলেটপ্রুফ গ্লাসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একের বেশি পলিকার্বনেট লেয়ার দেওয়া হয়ে থাকে। যার ফলে এই কাচের ঘনত্ব স্বাভাবিকভাবে ৭ মিলিমিটার থেকে ৭৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বুলেটপ্রুফ গ্লাস কীভাবে কাজ করে? যখন সাধারণ একটি কাচের শার্সিতে বুলেট আঘাত করে, তখন কাচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে সহজেই বুলেট ঢুকে যেতে পারে। কিন্তু বুলেটপ্রুফ গ্লাসের ভেতর বিভিন্ন শক্তপোক্ত, ফ্লেক্সিবল প্লাস্টিক স্যান্ডউইচের মতো করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় ঢোকানো হয় পিভিবি-ও। এরপর বারবার ওই কাচকে গরম ও ঠান্ডা করা হয়। এই ল্যামিনেশন পদ্ধতিতে কাচের ভেতরে ঢোকানো বস্তুগুলো ভালমতো জোড়া লেগে যায়। এরপর যদি বুলেট এসে আঘাত করে ওই কাচের শার্সিতে, তখন কাচের বাইরের স্তরটা আগের মতোই ভেঙে যায়। কিন্তু যখন তারা ভাঙে, আঘাতের শক্তিটাকে শুষে নেয় ও ছড়িয়ে দেয় ভেতরে স্যান্ডউইচ হয়ে থাকা স্তরে। এর ফলে বুলেটের গতিবেগ কমে যায়। কাচের শার্সি ভেদ করে তা আর ভেতরে ঢুকতে পারে না। ভাঙা কাচের অংশ দৃঢ়ভাবে প্লাস্টিকের সঙ্গে লেগে থাকে। তাই কাচের টুকরো ছিটকে ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে না।