যত্রতত্র ‘মূত্র বিসর্জন’ নয়, প্রস্রাব থেকেই এবার বিদ্যুৎ!

সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের প্রতিদিন মূত্র জমিয়ে রাখতে হবে। বিকল্প বিদ্যুৎ হিসাবে বাড়িতেই তৈরি ও ব্যবহার করা যাবে মূত্র-বিদ্যুৎ।

Mar 16, 2024 - 12:30
Mar 29, 2024 - 12:41
 0
যত্রতত্র ‘মূত্র বিসর্জন’ নয়, প্রস্রাব থেকেই এবার বিদ্যুৎ!

নয়াজমানা ডিজিটাল ডেস্ক : প্রাকৃতিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অপচয় বলে কিছু নেই, যদি যথাস্থানে যথাযথভাবে ওই বর্জ্যকে ব্যবহার হয়। প্রকৃতিতে যেকোনও প্রাণীর বর্জ্যের মতোই মানুষের মল-মূত্রও মহামূল্যবান। ইদানীং মানুষের মল থেকে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে বিদ্যুৎ। আর মানবমূত্র দিয়ে মাছের হরমোন ও জৈব ইট তৈরিও করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিকল্প সার হিসাবেও মানব মল-মূত্রের ব্যবহার হচ্ছে। মানবমূত্রকে ‘তরল সোনা’ হিসাবে বর্ণনা করছেন বিজ্ঞানীরা। মানবমূত্র বিকল্প সার হিসাবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত, প্রতি একর জমিতে সারা বছরের চাষবাসের জন্য মাত্র ১০ জনের মূত্রই সার হিসাবে যথেষ্ট। মলের মতোই এবার মূত্র ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখালেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। কেরলের পালক্কাড় আইআইটির একদল গবেষক তৈরি করেছেন এক বিশেষ চুল্লি। এই চুল্লি একদিকে প্রস্রাবে উপস্থিত রাসায়নিক ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। আবার, খনিজসমৃদ্ধ জৈব সারও তৈরি করতে পারে।

আইআইটি পালাক্কাড়ের বিজ্ঞানীদের এই বৈপ্লবিক প্রযুক্তিতে, মানুষের মূত্র ব্যবহার করে একই চুল্লি থেকে বিদ্যুৎ এবং সার দুইই তৈরি করা যাবে। মানবমূত্র উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদানগুলির একটি দুর্দান্ত উৎস। প্রস্রাবকে সার হিসাবে ব্যবহার নিয়ে বিশ্বকে পথ দেখানো উগান্ডার কাওন্দা কৃষি গবেষণা সংস্থার মাটি বিজ্ঞানী প্যাট্রিক মাখোসি সার হিসাবে মানবমূত্রের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে বলেছেন যে, প্রতি সপ্তাহে একবার করে কমপক্ষে দুমাস ধরে শাকসব্জির বাগানে প্রস্রাব প্রয়োগ করলে ফলন দ্বিগুণ হবে। মানবমূত্রে সাধারণত ৯৫ শতাংশ জল থাকে। বাকি উপাদানগুলির মধ্যে ইউরিয়া, ক্লোরাইড, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্রিয়েটিনিন এবং অন্যান্য দ্রবীভূত আয়ন ও জৈব-অজৈব যৌগগুলি রয়েছে। ইউরিয়া হল একটি অ-বিষাক্ত অণু, যা বিষাক্ত অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের রাসায়নিক মিশ্রণে তৈরি হয়। আইআইটি পালাক্কাড়ের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, মূত্রে উপস্থিত আয়নের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন সম্ভব।

গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রস্রাব থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই প্রযুক্তিযন্ত্রে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল বিক্রিয়ার ফলে একইসঙ্গে বিদ্যুৎ এবং জৈব সার উৎপন্ন হয়। এই প্রযুক্তিতে ৫০০ মিলিওয়াট এবং ৭ থেকে ১২ ভোল্টের বিদ্যুৎ তৈরি হয়। বর্তমানে এটি মোবাইল ফোন এবং এলইডি আলো চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, ভবিষ্যতে থিয়েটার এবং শপিং মলের মতো বড় জায়গার বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারবে এই প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিটি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। গবেষণাদলে রয়েছেন সঙ্গীতা ভি, সৃজিত পিএম এবং রিনু আনা কোশি। ‘সেপারেশন অ্যান্ড পিউরিফিকেশন টেকনোলজি’ জার্নালে তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। আর এই গবেষণার জন্য অর্থবরাদ্দ করেছে ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘সায়েন্স ফর ইক্যুইটি এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বিভাগ। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের প্রতিদিন মূত্র জমিয়ে রাখতে হবে। বিকল্প বিদ্যুৎ হিসাবে বাড়িতেই তৈরি ও ব্যবহার করা যাবে মূত্র-বিদ্যুৎ।